সূরা হুমাযাহ - হুমাযাহ অর্থ কি? - লুমাযাহ কারা?

সূরা হুমাযাহ এর তাফসীর, সূরা হুমাযাহ এর শানে নুযূল, সূরা হুমাযাহ বাংলা অর্থসহ, সূরা হুমাযাহ বাংলা অর্থ, লুমাযাহ কারা? হুমাযাহ অর্থ কি? Ni Creations

সূরা হুমাযাহ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচয়

সূরা হুমাযাহ (সুরা নম্বর ১০৪) — পবিত্র কুরআনের একটি ছোট অথচ গভীর অর্থবহ সূরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়, এবং এতে মোট ৯টি আয়াত রয়েছে। এই সূরায় আল্লাহ তায়ালা সতর্ক করেছেন সেইসব মানুষদের সম্পর্কে, যারা অন্যদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে,অন্যের দোষ খোঁজে এবং সম্পদে অহংকার করে।

সূরাটিতে মাত্র ৯টি আয়াত রয়েছে, কিন্তু এর বাণী এত গভীর যে এটি মানুষের অহংকার, গীবত, দম্ভ, ও সম্পদের গরিমা সম্পর্কে একটি শক্তিশালী শিক্ষা প্রদান করে।

বিষয় বর্ণনা
সূরার নাম সূরা আল-হুমাযাহ (الهمزة)
সূরার ক্রম ১০৪তম সূরা
অবতীর্ণ স্থান মক্কা
আয়াত সংখ্যা ৯টি
প্রধান বিষয় অহংকার, নিন্দা, পরনিন্দা ও মানব অপমানের পরিণতি

আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে পাঠক যেন কুরআনের এই সূরাটিকে কেবল মুখস্থই না করেন, বরং এর মর্মবাণী হৃদয়ে ধারণ করেন। তাই প্রতিটি আয়াতের নিচে অর্থ এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যা সূরাটির মূল বার্তা—অহংকার, পরনিন্দা ও ধনলোভ থেকে আত্মরক্ষা—সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরে।

surah-humazah-bangla-uccharon-lumazah-Ni-Creations
Table of Contents

সূরা হুমাযাহ বাংলা উচ্চারণ ও বাংলা অর্থ সহ

সূরা হুমাযাহ (سورة الهمزة) পবিত্র কুরআনের ১০৪তম সূরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এতে মোট ৯টি আয়াত রয়েছে। এই সূরায় আল্লাহ তা‘আলা অহংকারী, পরনিন্দাকারী ও ধন-সম্পদের গর্বে মত্ত মানুষের পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।

এই অংশে সূরার আরবি লেখা, বাংলা উচ্চারণ এবং বাংলা অর্থ একত্রে উপস্থাপন করা হয়েছে, যাতে পাঠক সহজে বুঝতে পারেন ও সঠিকভাবে তেলাওয়াত করতে পারেন। আরবি আয়াতগুলো কুরআনের আসল ভাষায় রাখা হয়েছে, এরপর দেওয়া হয়েছে বাংলা উচ্চারণ (Transliteration) ও অর্থ (Translation)।

আয়াত নং সূরা হুমাযাহ আরবি সূরা হুমাযাহ বাংলা উচ্চারণ সূরা হুমাযাহ বাংলা অর্থ
وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ ওয়াইলুল্লিকুল্লি হুমাযাতিল লুমাযাহ ধ্বংস প্রত্যেক হুমাযাহ ও লুমাযাহর জন্য।
الَّذِي جَمَعَ مَالًا وَعَدَّدَهُ আল্লাযি জামা’আ মালান ওয়া আদ্দাদাহু যে সম্পদ জমায় এবং তা গণনা করে।
يَحْسَبُ أَنَّ مَالَهُ أَخْلَدَهُ ইয়াহসাবু আননা মালাহু আখলাদাহু সে মনে করে, তার সম্পদ তাকে অমর করে রাখবে।
كَلَّا ۖ لَيُنبَذَنَّ فِي الْحُطَمَةِ কাল্লা, লা-ইউনবাযান্না ফিল হুতামাহ কখনই নয়! সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে হুতামাহতে।
وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْحُطَمَةُ ওয়া মা আদরাকা মাল হুতামাহ তুমি কি জানো হুতামাহ কী?
نَارُ اللَّهِ الْمُوقَدَةُ নারুল্লাহিল মূকাদাহ এটা আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত আগুন।
الَّتِي تَطَّلِعُ عَلَى الْأَفْئِدَةِ আল্লাতি তাত্তালিউ ‘আলাল আফইদাহ যা হৃদয়ে পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।
إِنَّهَا عَلَيْهِم مُّؤْصَدَةٌ ইন্নাহা ‘আলাইহিম মূসাদাহ তা তাদের ওপর বন্ধ করে দেওয়া হবে।
فِي عَمَدٍ مُمَدَّدَةٍ ফি ‘আমাদিম মুমাদ্দাদাহ দীর্ঘ স্তম্ভ দ্বারা ঘিরে রাখা হবে।

আমরা সূরাটির প্রতিটি আয়াত এমনভাবে সাজিয়েছি, যেন তা শুধু পাঠ নয় — বরং গভীরভাবে চিন্তা, আত্মসমালোচনা ও শিক্ষার উৎস হয়ে ওঠে। কারণ সূরা হুমাযাহ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, অহংকার, কটূভাষা ও পরনিন্দা মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।

হুমাযাহ অর্থ কী?

"হুমাযাহ" (الهمزة) শব্দটি এসেছে "হাম্‌জ" (همز) ধাতু থেকে, যার অর্থ - অন্যকে ইশারায়, চোখের ভঙ্গিতে, বা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে তুচ্ছ করা বা বিদ্রূপ করা।

অর্থাৎ, হুমাযাহ সেই ব্যক্তি,

  • যে অন্যের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করে,
  • ইঙ্গিতে ব্যঙ্গ করে,
  • কারও অনুপস্থিতিতে তাচ্ছিল্য ভরে নিন্দা করে,
  • এবং মানুষে মানুষে ফাটল ধরাতে চায়

এই ধরণের মানুষ নিজের গর্বে অন্ধ হয়ে যায়। নিজের দোষ না দেখে অন্যের দোষে মগ্ন থাকে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তাদের জন্য আছে "ওয়াইল" - অর্থাৎ, ধ্বংস ও কঠিন শাস্তি

লুমাযাহ কারা?

"লুমাযাহ" (اللمزة) শব্দটি এসেছে "লাম্‌জ" (لمز) ধাতু থেকে, যার অর্থ - সরাসরি মুখে বা কথার মাধ্যমে কাউকে অপমান করা, কটু সমালোচনা করা বা আঘাত করা।

অর্থাৎ, লুমাযাহ সেই ব্যক্তি,

  • সরাসরি কাউকে লাঞ্চিত ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে।
  • কাউকে তাচ্ছিল্য ভরে কোনকিছু নির্দেশ করে (আঙুল,চোখ, মাথা বা ভ্রু দ্বারা) ।
  • কারও অবস্থান বা পদবি নিয়ে তাকে ব্যাঙ্গ করে।
  • কারো বংশের নিন্দা করে বা বংশ নিয়ে কথা বলে।
  • কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করে কথা বলে, অপমান করে।
  • কারও মুখের উপর তার সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্য করে।
  • সরাসরি বাজে কথা দিয়ে কাউকে আঘাত করে।
  • কাউকে এমন কোনো কথা বললো যাতে আরেকজন কষ্ট পাবে।
  • অসন্মান করে কথা বললো।

এইসব লোক নিজেদের "স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড" বা "খোলামেলা" বলে গর্ব করে, কিন্তু ইসলাম অনুযায়ী - এই অসৌজন্যতা, রূঢ়তা ও ব্যঙ্গাত্মক আচরণই লুমাযাহর বৈশিষ্ট্য।

  1. "লুমাযাহ" উদাহরণ ১: স্ত্রী ঘেমে-নেয়ে চা-নাস্তা বানিয়ে স্বামীকে দিলেন। স্বামী চুমুক দিয়েই বললেন- "এখনও মা'র মতো চা বানাতে শেখনি! কতবার বলেছি মা'র কাছ থেকে শেখো।"
    এটাই "লুমাযাহ"। যে মানুষের মুখের ওপর তুচ্ছ মন্তব্য করে তাকে ছোট করে ফেলে - সে লুমাযাহর অন্তর্ভুক্ত।
  2. "লুমাযাহ" উদাহরণ ২: একজন অফিস কর্মচারী সহকর্মীর ছোট ভুল ধরলেন। সবাইয়ের সামনে বললেন- "তুমি তো কিছুই ঠিকভাবে করতে পারো না!"
    এই ধরনের প্রকাশ্য অপমান, খোঁচা বা বিদ্রূপও "লুমাযাহ" আচরণ।

হুমাযাহ ও লুমাযাহ এর পার্থক্য

বিষয় হুমাযাহ লুমাযাহ
আচরণের ধরন ইঙ্গিতে, চোখে, মুখভঙ্গিতে অপমান করা সরাসরি কথায় বা মুখে অপমান করা
স্থান সাধারণত অনুপস্থিত ব্যক্তির নিন্দা করা উপস্থিত ব্যক্তিকে কটু কথা বলা
উদ্দেশ্য অন্যকে হেয় করা ও ফাটল ধরানো নিজের শ্রেষ্ঠত্ব দেখানো
উদাহরণ পেছনে গীবত করা, ব্যঙ্গ করা মুখের সামনে কটু কথা বলা

দুই ধরনের আচরণই ইসলামে বড় গুনাহ এবং আল্লাহর কাছে ঘৃণিত।

surah-humazah-bangla-humazah-lumazah-Ni-Creations

হুমাযাহ অর্থ কি?

“হুমাযাহ” (الهمزة) শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ “হাময” (همز) থেকে, যার অর্থ — অন্যের দোষ ধরা, গোপনে নিন্দা করা, বিদ্রূপ বা কটূক্তি করা। ইসলামী পরিভাষায়, হুমাযাহ হল সেই ব্যক্তি যিনি অন্যের পেছনে তার ত্রুটি নিয়ে কথা বলেন, তাকে হেয় করে এবং নিজের শ্রেষ্ঠত্বে গর্ব করেন।

  • হুমাযাহ = পরনিন্দাকারী বা দোষ ধরনেওয়ালা ব্যক্তি।
  • হুমাযাহ ব্যক্তি অন্যের সম্মানহানি করে।
  • এদের জন্য কুরআনে কঠিন শাস্তির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

হুমাযাহ শব্দের অর্থ কী?

“হুমাযাহ” শব্দের আভিধানিক অর্থ পরনিন্দাকারী, অপবাদদাতা, বিদ্রূপকারী, বা মানহানিকারী। এই শব্দটি এমন ব্যক্তিদের বোঝায় যারা অন্যের ত্রুটি খুঁজে বের করে তা নিয়ে ব্যঙ্গ করে বা কটূভাবে মন্তব্য করে।

  • আরবি মূল শব্দ: همز (হাময)
  • অর্থ: বিদ্রূপ করা, দোষ ধরা, অপমান করা।
  • ধর্মীয় অর্থে: অন্যের পেছনে নিন্দা করে, তাকে ছোট করে দেখা।

লুমাযাহ কারা?

“লুমাযাহ” (اللمزة) শব্দটি এসেছে “লাময” (لمز) ধাতু থেকে, যার অর্থ — সামনাসামনি তিরস্কার বা অপমান করা। অর্থাৎ, লুমাযাহ হলো সেই ব্যক্তি যিনি অন্যকে সামনে বিদ্রূপ করে, কটূভাবে কথা বলে, বা উপহাস করে অপমান করেন।

  • হুমাযাহ — পিছনে নিন্দা করে।
  • লুমাযাহ — সামনে অপমান করে।

দুজনেই অন্যের সম্মান নষ্টকারী, যার জন্য আল্লাহর কঠোর শাস্তি আছে।

হুমাযাহ ও লুমাযাহ অর্থ কি?

হুমাযাহ ও লুমাযাহ — দুটি শব্দই নিন্দা ও বিদ্রূপ করার দুটি আলাদা রূপ বোঝায়। কুরআনে সূরা হুমাযাহ’র প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে: “ويل لكل همزة لمزة” — ধ্বংস প্রতিটি হুমাযাহ ও লুমাযাহর জন্য।

শব্দ অর্থ কর্মের ধরন
হুমাযাহ (Humazah) পিছনে নিন্দাকারী গোপনে অন্যের বদনাম করা
লুমাযাহ (Lumazah) সামনে অপমানকারী সরাসরি তিরস্কার বা কটূক্তি করা

অর্থাৎ, উভয়ের কাজই অন্যের সম্মানহানি করা এবং আল্লাহর নিকট এটি মহাপাপ।

সূরা হুমাযাহ কোথায় অবতীর্ণ হয়েছিল?

সূরা হুমাযাহ একটি মক্কী সূরা। এটি মক্কা মুকাররমায় অবতীর্ণ হয়েছিল। সূরাটিতে মোট ৯টি আয়াত আছে এবং এটি কুরআনের ১০৪তম সূরা।

  • অবতীর্ণ স্থান: মক্কা মুকাররমা।
  • সূরার ধরন: মক্কী সূরা।
  • বিষয়বস্তু: অহংকার, পরনিন্দা ও অর্থলোলুপতা।

এই সূরাটি নাজিল হয়েছিল সেইসব ধনী, গর্বিত ও বিদ্রূপপ্রিয় লোকদের জন্য যারা অন্যদের অপমান করত এবং মনে করত তাদের সম্পদই তাদেরকে চিরজীবী রাখবে।

সূরা হুমাযাহ শিক্ষা কি?

সূরা হুমাযাহ আমাদের জীবনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক শিক্ষা বহন করে। এটি মানুষকে সতর্ক করে দেয় যেন কেউ পরনিন্দা, অপবাদ, অহংকার ও বিদ্রূপের পথে না চলে।

  • পরনিন্দা ও অপবাদ থেকে বিরত থাকা।
  • ধন-সম্পদে অহংকার না করা।
  • অন্যের প্রতি বিনয়ী আচরণ করা।
  • আল্লাহর শাস্তি ও জবাবদিহিতার ভয় রাখা।
  • হুতামাহ বা জাহান্নামের ভয়াবহতা স্মরণে রাখা।

এ সূরার মূল শিক্ষা হলো — মানুষের সম্মান রক্ষা করা ও অহংকার থেকে বাঁচা।

যারা সামনে ও পিছনে লোকের নিন্দা করে তাদেরকে কোথায় নিক্ষিপ্ত করা হবে?

কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী: “كَلَّا لَيُنۢبَذَنَّ فِى ٱلْحُطَمَةِ”“না, অবশ্যই তাকে নিক্ষেপ করা হবে হুতামাহতে।” (সূরা হুমাযাহ: ৪)হুতামাহ (الحُطَمَة) অর্থ — ভেঙে চূর্ণ করে ফেলা আগুন। এটি জাহান্নামের এমন এক ভয়াবহ অংশ যা মানুষের হৃদয় পর্যন্ত জ্বালিয়ে দেয়।

  • নিন্দাকারীদের গন্তব্য: হুতামাহ
  • এটি জাহান্নামের এক ভয়ংকর স্তর।
  • তাদের অহংকার, বিদ্রূপ ও অপবাদের প্রতিদান হিসেবেই এই শাস্তি নির্ধারিত।
You may also like...

সূরা হুমাযাহ - আমাদের শেষকথা

সূরা হুমাযাহ আমাদের শেখায়— অন্যকে হেয় করা, উপহাস করা বা পরনিন্দা করা কেবল কথার খেলা নয়, এটি আল্লাহর কাছে গুরুতর অপরাধ। হুমাযাহলুমাযাহ সমাজে আগুন ছড়ায়, সম্পর্ক ভাঙে, হৃদয় আহত করে। এদের জন্য নির্ধারিত শাস্তি হলো “হুতামাহ”—এক আগুন যা হৃদয়ে প্রবেশ করবে।

আজ ‘Ni Creations’ ব্লগে লিখে আমরা চেয়েছি — এই সূরার গভীর শিক্ষা, তার রহস্য, এবং আমাদের জীবনে প্রয়োগযোগ্য দিক সকলকে তুলে ধরা। আশা করি এই লেখা আপনাদের হৃদয় স্পর্শ করবে এবং আমরাও নিজেদের পরিবর্তন করব।

আসুন, আমরা আল্লাহর কাছে দোআ করি — “হে আল্লাহ! আমাদের জবানকে হেফাজত করো, অন্তরকে পরিশুদ্ধ করো, এবং হুমাযাহলুমাযাহ-র কাজ থেকে আমাদের দূরে রাখো।” আমিন। 🤲

About the author

Rahela Nishi
Hi, I’m Rahela Akter NishiContent Writer & Digital Enthusiast. I specialize in crafting engaging content for NextGen Digital Hub, with a focus on technology, freelancing, and digital marketing. I'm also the founder of Ni Creations. Passio…

Post a Comment