সূরা হুমাযাহ এর তাফসীর - ভূমিকা
স্বাগতম Ni Creations ব্লগে! ইসলামিক ধর্মগ্রন্থ কুরআনুল কারিমে প্রতিটি সূরা ও আয়াতের রয়েছে গভীর অর্থ ও শিক্ষা। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা হলো সূরা হুমাযাহ, এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর মধ্যে রয়েছে মানুষের গীবত, পরনিন্দা ও অহংকারের বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কতা।
সূরা হুমাযাহ কুরআনের ১০৪-তম সূরা, মাক্কী সূরা হিসেবে নাজিল। এই সূরার মূল বার্তা হলো অহংকার, গীবত ও সম্পদের অহংকারের ভয়াবহ পরিণতি।
- সূরার নাম: আল-হুমাযাহ (الهمزة)
- অর্থ: নিন্দাকারী বা দোষারোপকারী
- আয়াত সংখ্যা: ০৯
- নাজিলের স্থান: মক্কা
- মূল বার্তা: অহংকারী ও ধনলিপ্সু মানুষের সতর্কতা, নিন্দা এবং ধনলিপ্সার চরম ফলাফল।
সূরা হুমাযাহ একটি ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সূরা যা মানব চরিত্র ও সমাজে অর্থের প্রতি আসক্তি, অহংকার ও গুণাহ সম্পর্কে সতর্ক করে।
Table of Contents
এই ব্লগ পোস্টটি বিশেষভাবে সাজানো হয়েছে সূরা হুমাযাহ এর তাফসীর, বাংলা উচ্চারণ, অর্থ, ব্যাখ্যা এবং নোটসহ, যাতে আপনি পুরোপুরি সূরাটির গভীরতা উপলব্ধি করতে পারেন।

সূরা হুমাযাহ এর তাফসীর - বাংলা উচ্চারণ ও বাংলা অর্থ সহ
সূরা হুমাযাহ মূলত মানুষের খারাপ চরিত্র ও সমাজের অশুদ্ধ দিকগুলো সম্পর্কে সতর্ক করে। এই সূরায় আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য কঠিন শাস্তির কথা বলেছেন যারা অন্যদের নিয়ে হাসি-তামাশা করে, তাদেরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে এবং শুধু সম্পদ সংগ্রহ করে কিন্তু তা সঠিকভাবে ব্যয় করে না।
আমরা সূরাটির প্রতিটি আয়াত এমনভাবে সাজিয়েছি, যেন তা শুধু পাঠ নয় — বরং গভীরভাবে চিন্তা, আত্মসমালোচনা ও শিক্ষার উৎস হয়ে ওঠে। কারণ সূরা হুমাযাহ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, অহংকার, কটূভাষা ও পরনিন্দা মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।
সূরা হুমাযাহ এর তাফসীর এর মাধ্যমে আমরা এই সূরার প্রতিটি আয়াতের গভীর অর্থ ও শিক্ষা জানতে পারি। এখন আমরা সূরা হুমাযাহ এর প্রতিটি আয়াতের বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ আলোচনা করব। নিচে প্রতিটি আয়াতের ব্যাখ্যা প্রদান করা হলো:
- - بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
- - - বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
- - - - পরম করুণাময়, অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
- সূরা হুমাযাহ - আয়াত: ০১
- - وَيْلٌ لِكُلِّ هُمَزَةٍ لُمَزَةٍ
- - - ওয়াইলু লিকুল্লি হুমাযাতিল্লুমাযাহ
- - - - প্রত্যেক হুমাযাহ ও লুমাযাহকারীর জন্য ধ্বংস।
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা পরনিন্দাকারীদের জন্য দুর্ভোগের ঘোষণা দিয়েছেন। 'হুমাযাহ' শব্দের অর্থ হলো গীবত বা পরনিন্দা করা, আর 'লুমাযাহ' মানে হলো দোষারোপ বা তিরস্কার করা। এই আয়াতে আল্লাহ্ তাআলা তাদের জন্য ধ্বংসের ঘোষণা দিয়েছেন যারা অন্যদের গীবত ও লুমাযাহ করে।
- সূরা হুমাযাহ - আয়াত: ০২
- - الَّذِي جَمَعَ مَالًا وَعَدَّدَهُ
- - - আল্লাযী জামা'আ মা-লাওঁ'ওয়া 'আদ্দাদাহ
- - - - যে অর্থ সঞ্চিত করে ও গণনা করে,
এই আয়াতে বলা হয়েছে যে, যারা অর্থ সঞ্চয় করে এবং তা গুণে গুণে রাখে, তারা মনে করে যে, তাদের অর্থ চিরকাল তাদের সাথে থাকবে। এটি তাদের অহংকার ও আত্মমগ্নতার প্রতিফলন।
- সূরা হুমাযাহ - আয়াত: ০৩
- - يَحْسَبُ أَنَّ مَالَهُ أَخْلَدَهُ
- - - ইয়াহছাবু আন্না মা-লাহূ আখলাদাহ
- - - - সে মনে করে যে, তার অর্থ চিরকাল তার সাথে থাকবে!
এই আয়াতে বলা হয়েছে যে, তারা মনে করে যে, তাদের অর্থ তাদেরকে চিরকাল বাঁচিয়ে রাখবে। এটি তাদের আত্মবিশ্বাসের অতিরিক্ততা এবং আল্লাহর প্রতি অবিশ্বাসের প্রতিফলন।
- সূরা হুমাযাহ - আয়াত: ০৪
- - كَلَّا لَيُنْبَذَنَّ فِي الْحُطَمَةِ
- - - কাল্লা-লাইউম্বাযান্না ফিল হুতামাহ
- - - - কখনও নয়, তাকে তো চূর্ণ-বিচূর্ণকারী জায়গায় ফেলে দেয়া হবে।
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন যে, তাদেরকে চূর্ণ-বিচূর্ণকারী জায়গায় নিক্ষেপ করা হবে। "হুতামাহ" শব্দটি মানে হল পিষে ফেলা বা চূর্ণ-বিচূর্ণ করা। এটি জাহান্নামের কঠিন শাস্তির প্রতীক।
- সূরা হুমাযাহ - আয়াত: ০৫
- - وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْحُطَمَةُ
- - - ওয়া মা'আদরা-কা মাল হুতামাহ
- - - - আর তুমি কি জানো সেই চূর্ণ-বিচূর্ণকারী জায়গাটি কি?
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা প্রশ্ন করেছেন, "তুমি জানো কি সেই চূর্ণ-বিচূর্ণকারী জায়গাটি কি?" এটি তাদের শাস্তির ভয়াবহতা বোঝানোর জন্য।
- সূরা হুমাযাহ - আয়াত: ০৬
- - نَارُ اللَّهِ الْمُوقَدَةُ
- - - নারুল্লাহিল মূকাদাহ
- - - - এটি আল্লাহ্ তাআলার প্রজ্জ্বলিত আগুন।
এই আয়াতে বলা হয়েছে যে, এটি আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত আগুন। "মূকাদাহ" শব্দটি মানে হল প্রজ্জ্বলিত বা জ্বালানো। এটি জাহান্নামের আগুনের বর্ণনা।
- সূরা হুমাযাহ - আয়াত: ০৭
- - الَّتِي تَطَّلِعُ عَلَى الْفُؤَادِ
- - - আল্লাতী তাত্তালি'উ আলাল আফইদাহ
- - - - যা হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।
এই আয়াতে বলা হয়েছে যে, এই আগুন হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। এটি জাহান্নামের আগুনের তীব্রতা এবং তার শাস্তির ব্যাপ্তির প্রতিফলন।
- সূরা হুমাযাহ - আয়াত: ০৮
- - إِنَّهَا عَلَيْهِم مّؤْصَدَةٌ
- - - ইন্নাহা 'আলাইহিম মু'সাদাহ
- - - - তে তাদেরকে বেঁধে দেয়া হবে,
এই আয়াতে বলা হয়েছে যে, তাদেরকে জাহান্নামের মধ্যে বেঁধে রাখা হবে। "মু'সাদাহ" শব্দটি মানে হল বন্ধ করে দেয়া বা আটকানো। এটি তাদের শাস্তির কঠোরতা বোঝানোর জন্য।
- সূরা হুমাযাহ - আয়াত: ০৯
- - فِي عَمَدٍ مُّمَدَّدَةٍ
- - - ফী 'আমাদিম মুমাদ্দাদাহ
- - - - লম্বা লম্বা খুঁটিতে।
এই আয়াতে বলা হয়েছে যে, তাদেরকে উঁচু উঁচু খুঁটিতে বাঁধা হবে। "আমাদিম" শব্দটি মানে হল খুঁটি, এবং "মুমাদ্দাদাহ" মানে হল বাঁধা দেয়া। এটি তাদের শাস্তির দৃঢ়তা এবং স্থায়িত্বের প্রতীক।
এই সূরায় আল্লাহ তাআলা এমন ব্যক্তিদের নিন্দা করেছেন যারা মানুষের খারাপ দিকের জন্য কথা বলে, অহংকারে ভরা, ধন ও সম্পদকে জীবনের সর্বোচ্চ উদ্দেশ্য মনে করে। এই ধরনের মনোভাবের ফলাফল পরকালীন জাহান্নামে কঠোর শাস্তি।
সূরা হুমাযাহ এর শানে নুযুল
শানে নুযুল বলতে কুরআনের কোনো আয়াত বা সূরা কোন বিশেষ ঘটনার প্রেক্ষিতে অবতীর্ণ হয়েছে, তা বোঝায়। সূরা হুমাযাহ এর শানে নুযুল সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে। একাধিক হাদিসে উল্লেখ আছে যে, মক্কার কিছু ধনী ও ক্ষমতাশালী ব্যক্তি গরীব ও দুর্বল মুসলিমদের নিয়ে হাসি-তামাশা করত এবং তাদেরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করত। তাদের এই আচরণকে লক্ষ্য করে সূরা হুমাযাহ অবতীর্ণ হয়।
সূরা হুমাযাহ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এটি মক্কী সূরা হিসেবে পরিচিত। এটি মূলত গীবত, পরনিন্দা ও অর্থলিপ্সার বিরুদ্ধে সতর্কতা প্রদান করে। এই সূরায় আল্লাহর আযাবের ভয়াবহতা ও তার প্রতি আনুগত্যের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
সূরা হুমাযাহ-র শিক্ষা অনুসরণ করে, আমরা একটি ন্যায়বিচারপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারি। আল্লাহ্ তাআলা আমাদের সবাইকে এই সূরার শিক্ষা হৃদয়ে ধারণ করে আমল করার তাওফিক দিন।
সূরা হুমাযাহ এর ব্যাখ্যা
সূরা হুমাযাহ মূলত গীবত, পরনিন্দা, অহংকার ও অর্থের প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসার বিরুদ্ধে সতর্কতা প্রদান করে। এই সূরার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মানুষকে শিক্ষা দিচ্ছেন যে, যারা অন্যদের ছোট করে, তাদের পরিণতি হবে দুঃখজনক। তাদের ধন-সম্পদ তাদের কোন কাজে আসবে না, যদি তারা নেক আমল না করে।
- সূরা হুমাযাহ গীবত, লুমাযাহ এবং অর্থলিপ্সার বিরুদ্ধে সতর্কতা প্রদান করে।
- এটি মুসলিমদের নৈতিক শুদ্ধতা ও আত্মশুদ্ধির প্রতি গুরুত্বারোপ করে।
- এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এতে ৯টি আয়াত রয়েছে।
- সূরা হুমাযাহ এর তাফসীর মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক শিক্ষা প্রদান করে।
এই সূরার মাধ্যমে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে যে, আমাদের চরিত্র ও আচরণ যেন সৎ ও ন্যায়ের পথে থাকে। অন্যদের নিয়ে হাসি-তামাশা না করে, তাদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। এছাড়া, আমাদের সম্পদ সঠিকভাবে ব্যয় করতে হবে এবং আল্লাহর পথে দান করতে হবে।
সূরা হুমাযাহ এর নোট
এই সূরাটি মানুষের চরিত্রগত দুর্বলতা ও সমাজে গীবত, পরনিন্দা, অহংকার এবং দুনিয়ার প্রতি অতিরিক্ত মোহের বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কতা প্রদান করে। এটি মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা, যা তাদের আধ্যাত্মিক উন্নতি ও সামাজিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে সহায়ক।
- গীবত ও পরনিন্দা: সূরা হুমাযাহ তে গীবত ও পরনিন্দার বিরুদ্ধে সতর্কতা প্রদান করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, যারা অন্যদের সম্মুখে ও পশ্চাতে পরনিন্দা করে, তাদের জন্য দুর্ভোগ অপেক্ষা করছে।
- অর্থলিপ্সা: সূরা হুমাযাহ তে অর্থলিপ্সার বিরুদ্ধে সতর্কতা প্রদান করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, যারা অর্থ সঞ্চিত করে ও গণনা করে, তারা মনে করে যে, তাদের অর্থ চিরকাল তাদের সাথে থাকবে। তবে, তাদের জন্য চূর্ণ-বিচূর্ণকারী জায়গায় ফেলে দেয়া হবে।
- আল্লাহর আযাব: সূরা হুমাযাহ তে আল্লাহর আযাবের ভয়াবহতা তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, আল্লাহর আগুন প্রচণ্ডভাবে উৎক্ষিপ্ত, যা হৃদয় অভ্যন্তরে পৌঁছে যাবে। এতে তাদের ওপর ঢেকে দিয়ে বন্ধ করা হবে এবং উঁচু উঁচু থামে (ঘেরাও হয়ে থাকবে)।
সূরা হুমাযাহ এর তাফসীর ও বাংলা উচ্চারণ সহ ব্যাখ্যা মুসলিমদের জন্য একটি মূল্যবান শিক্ষা, যা তাদের আধ্যাত্মিক উন্নতি ও সামাজিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে সহায়ক।
সূরা হুমাযাহ আমাদের জীবনে আত্মসমালোচনা ও সতর্কতা বজায় রাখতে শেখায়। এটি শিক্ষা দেয় যে ধন-সম্পদ, অহংকার বা অন্যের ক্ষতি আমাদের মূল্যবান সময় এবং আখিরাতের জন্য হুমকি। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে হলে, আমাদের সতর্ক, দায়িত্বশীল এবং সদাচারী হতে হবে।
সূরা হুমাযাহ এর তাফসীর - FAQs
এই অংশে আমরা সূরা হুমাযাহ সম্পর্কিত সবচেয়ে সাধারণ প্রশ্ন ও তাদের বিস্তারিত উত্তর তুলে ধরছি। এখানে আপনি জানতে পারবেন সূরার অর্থ, প্রাসঙ্গিক শিক্ষণীয় বার্তা, বিভিন্ন আয়াতের ব্যাখ্যা এবং এই সূরার দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ সম্পর্কিত জিজ্ঞাসাগুলোর সহজ ও স্পষ্ট উত্তর। এটি শিক্ষার্থী, সাধারণ পাঠক এবং যারা ইসলামী জ্ঞান সমৃদ্ধ করতে আগ্রহী তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রিসোর্স।
হুমাযাহ অর্থ কি?
‘হুমাযাহ’ শব্দের অর্থ হলো যে ব্যক্তি অন্যের খারাপ দিক নিয়ে নিন্দা ছড়ায় এবং গোপনে কটুক্তি করে। সূরা হুমাযাহ মূলত এমন মানুষের চরিত্রকে আঙ্গিক করে যারা অহংকার ও লোভের কারণে অন্যকে ছোট করার চেষ্টা করে।
হুমাযাহ এর মূল বৈশিষ্ট্য:
- অন্যের পেছনে গোপনে কথা বলা বা কটুক্তি করা
- সমাজে কুৎসিত ছাপ ফেলা বা মানুষের খারাপ দিক নিয়ে আলোচনা
- অহংকারপূর্ণ আচরণ, নিজের মর্যাদা বাড়াতে অন্যকে ছোট করা
যারা সামনে ও পিছনে লোকের নিন্দা করে তাদেরকে কোথায় নিক্ষিপ্ত করা হবে?
সূরা হুমাযাহ অনুযায়ী, যারা অহংকার ও নিন্দা ছড়ায়, তারা জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবেন। এটি তাদের অসৎ কর্মের জন্য শাস্তি।
জাহান্নামের বৈশিষ্ট্য:
- চরম তপ্ত এবং ধ্বংসাত্মক আগুন
- শারীরিক ও মানসিক চরম কষ্ট
- নৈতিক ও আধ্যাত্মিক ফলাফলের শাস্তি
অন্যকে ছোট করার চেষ্টা কখনো কাম্য নয়; সততা ও সদাচার বজায় রাখা প্রয়োজন।
সূরা হুমাযায় জাহান্নামের আগুনের বৈশিষ্ট্য কী কী?
জাহান্নামের আগুনকে সূরায় বলা হয়েছে যে এটি শারীরিক ও মানসিক উভয় কষ্ট প্রদান করে। এটি শুধুমাত্র শাস্তি নয়, বরং মানুষের নৈতিক পথচলা সংশোধনের জন্য সতর্কবার্তা।
বৈশিষ্ট্যগুলো:
- অত্যন্ত তীব্র তপ্ত এবং ধ্বংসাত্মক
- অহংকার, লোভী ও নিন্দুকদের জন্য চরম শাস্তি
- মানুষের অসৎ কর্মের ফলাফল হিসেবে চরম কষ্ট প্রদান
সূরা হুমাযাহ কোথায় অবতীর্ণ হয়েছিল?
সূরা হুমাযাহ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছিল। এটি মূলত মক্কার সমাজের অহংকার, লোভ এবং নিন্দার বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা।
প্রধান উদ্দেশ্য:
- অহংকার ও লোভী চরিত্রের সামাজিক ক্ষতি চিহ্নিত করা
- নিন্দুক ও অহংকারী মানুষের সতর্ক করা
- সদাচার ও নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব বোঝানো
লুমাযাহ কারা?
লুমাযাহ হলো যে ব্যক্তি অন্যকে নিন্দা ও অপমান ছড়ায়। তারা হুমাযাহ-এর সঙ্গী হিসেবে বিবেচিত।
মূল বৈশিষ্ট্য:
- সমাজে নৈতিক বিপর্যয় ঘটানো
- অন্যকে ছোট করার প্রচেষ্টা
- নিজের অহংকার প্রদর্শন
"হুমাযাতিল লুমাযাহ" এর অর্থ কী?
"হুমাযাতিল লুমাযাহ" মানে হলো যে ব্যক্তি নিন্দা ও কটুক্তি ছড়ায়। এটি সূরার মূল বার্তা হিসেবে মানুষের নৈতিক দিকনির্দেশনা দেয়।
- অন্যকে ছোট করার প্রবৃত্তি
- সামাজিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করা
- আধ্যাত্মিক ক্ষতি এবং শাস্তি আহরণ করা
সূরা হুমাযাহ এর শিক্ষা কি?
সূরা হুমাযাহ আমাদের শেখায় কিভাবে নৈতিক ও সামাজিক সতর্কতা বজায় রাখা যায়।
সূরা হুমাযাহ এর মূল শিক্ষা:- অহংকার ও লোভ জীবনকে ধ্বংস করে, তাই এ থেকে বিরত থাকা জরুরি
- অন্যের সম্পদ ও মর্যাদা ছোট করা নিষিদ্ধ এবং ক্ষতিকর
- সদাচার, ধৈর্য এবং পরোপকারিতা জীবনের সার্থকতা বৃদ্ধি করে
সূরা হুমাযাহ নিন্দা, অহংকার ও লোভ থেকে বিরত থাকার গুরুত্ব বোঝায় এবং নৈতিক ও আধ্যাত্মিক জীবনে সতর্ক থাকার পথ নির্দেশ করে।
এই FAQs সেকশনটি আপনাকে সূরা হুমাযাহ-এর গভীর বার্তা, আয়াতের অর্থ এবং দৈনন্দিন জীবনে এর ব্যবহার সহজভাবে বোঝাতে সাহায্য করবে। এটি নতুন এবং অভিজ্ঞ উভয় পাঠকের জন্য উপকারী।
You may also like...
সূরা হুমাযাহ এর তাফসীর - আমাদের শেষকথা
সূরা হুমাযাহ আমাদেরকে গীবত, পরনিন্দা ও অর্থলিপ্সার বিরুদ্ধে সতর্ক করে। এতে আল্লাহর আযাবের ভয়াবহতা ও তার প্রতি আনুগত্যের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের উচিত এই সূরার শিক্ষা গ্রহণ করে, নিজেদের আচরণ ও মনোভাব সংশোধন করা।
সূরা হুমাযাহ আমাদের শেখায় — “মানুষের মর্যাদা ধন-সম্পদে নয়, বরং চরিত্রে।” যে ব্যক্তি অন্যকে অপমান করে, সে আসলে নিজের মান নষ্ট করে। আর যে মানুষ আল্লাহভীতিতে বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাআলা তাকে উত্তম মর্যাদা দান করেন।
আসুন, আমরা সূরা হুমাযাহ এর শিক্ষা-কে অন্তরে ধারণ করি এবং এমন সমাজ গড়ি যেখানে সম্মান, দয়া ও বিনয় থাকবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সূরা হুমাযাহ এর শিক্ষার আলোয় জীবন গঠনের তাওফিক দিন। আমীন।